ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে শত বছরের বৈশাখী মেলা 

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১২:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২ বার পড়া হয়েছে
 সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: প্রতি বছরের ন্যায় এবারও টাঙ্গাইলে শত বছরের প্রাচীন বৈশাখী মেলা বসেছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের এই দিনে বিশেষ এ মেলার আয়োজন করা হয়। রবিবার ১৪ এপ্রিল সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায় টাঙ্গাইল শ্রী শ্রী কালীবাড়ী মন্দিরে গিয়ে।
 জানা যায়, বাংলা ১৩১৯ সালে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রার কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের এই দিনে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা উদযাপিত হয়ে আসছে।
মেলা উপলক্ষে ৪০ থেকে ৫০ টি দোকান বসেছে। এসব দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় থালা-বাসন, মাটির খেলনা, জিলাপী, চিনির সাজ, বিন্নী ধানের খইসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা উঠেছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার সুনীল চন্দ্র (৫০) জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এই মেলায় থালা বাসন বিক্রি করেন। ঈদের জন্য এবার তার বিক্রি গতবারের তুলনায় কম হবে বলে জানান তিনি।
ঘাটাইলের কদমতলী এলাকার জিলাপী ব্যবসায়ী ঈসমাইল হোসেন (৪৮) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর যাবত এই মেলায় জিলাপী বিক্রি করে চলেছেন তিনি। মেলায় এক দিনে ১০ মণ জিলাপী বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও টাঙ্গাইল পাঁচআনী-ছয়আনী বাজারের চেয়েও তার জিলাপীর দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জিলাপী অনেক সুস্বাদু ও ভেজালমুক্ত। প্রতি কেজি জিলাপী তিনি ১৮০ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার এনায়েতপুর এলাকার কুমার নিখিল চন্দ্র পাল (৪০) জানান, কুমারের এই ব্যবসা তাদের শত শত বছরের। বৈশাখী মেলায় তিনি ২০ বছর যাবত মাটির খেলনা বিক্রি করে আসছেন। বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন রঙ-বেরঙের মাটির ব্যাংক, ফুলদানি ও মাটির হাড়ি বিক্রি করে থাকেন। মেলায় প্রতিবছর তিনি গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন।
দেলদুয়ারের পাথরাইল থেকে প্রথম মেলায় আসা চিনির সাজ ও খই ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র সাহা (৫০) জানান,  পুরাতন ব্যবসায়ী হলেও কালীবাড়ী বৈশাখী মেলায় তিনি এবার প্রথম এসেছেন। মেলায় এসে বিক্রি ভালো হওয়ায় তিনি বেশ খুশি।
মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা জীবন কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, কালীবাড়ী মন্দিরে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে। শত বছরের পুরাতন মেলা শুধু টাঙ্গাইলে না দেশের অনেক স্থানে পাওয়া প্রায় অপ্রতুল।
তিনি বলেন, বাংলা ১৩১৯ সালে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রার কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার তার বাবা ও মা কে উৎস্বর্গ করে এই কালীবাড়ী মন্দির স্থাপন করেন। সেই থেকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, বৈশাখী মেলা বা বৈশাখের মেলা হচ্ছে একটি বাঙালি উৎসব মেলা, যা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে আয়োজিত হয়। এটি একটি সার্বজনীন উৎসব, যা বর্তমানে বাংলাদেশের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্তৃক প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের সাথে আয়োজন করা হয়।
ইতিহাস পন্ডিতেরা মনে করেন মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে হিজরি, চন্দ্রাসন ও ইংরেজি সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয় বলে জানা যায়। নতুন এ সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত থাকলেও বঙ্গাব্দ হিসেবেই তা পরিচিতি পায়। বাংলা নববর্ষ সম্রাট আকবরের সময় থেকে পালন করা হত। ওই সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত। মেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো এ উপলক্ষে। পরবর্তী সময়ে বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করা হতো, সে মেলাকে ‘বৈশাখী মেলা’ নামে নামকরণ করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টাঙ্গাইলে শত বছরের বৈশাখী মেলা 

আপডেট সময় : ১২:১২:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
 সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: প্রতি বছরের ন্যায় এবারও টাঙ্গাইলে শত বছরের প্রাচীন বৈশাখী মেলা বসেছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের এই দিনে বিশেষ এ মেলার আয়োজন করা হয়। রবিবার ১৪ এপ্রিল সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায় টাঙ্গাইল শ্রী শ্রী কালীবাড়ী মন্দিরে গিয়ে।
 জানা যায়, বাংলা ১৩১৯ সালে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রার কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে প্রতি বছরের এই দিনে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা উদযাপিত হয়ে আসছে।
মেলা উপলক্ষে ৪০ থেকে ৫০ টি দোকান বসেছে। এসব দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় থালা-বাসন, মাটির খেলনা, জিলাপী, চিনির সাজ, বিন্নী ধানের খইসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা উঠেছে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার সুনীল চন্দ্র (৫০) জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এই মেলায় থালা বাসন বিক্রি করেন। ঈদের জন্য এবার তার বিক্রি গতবারের তুলনায় কম হবে বলে জানান তিনি।
ঘাটাইলের কদমতলী এলাকার জিলাপী ব্যবসায়ী ঈসমাইল হোসেন (৪৮) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছর যাবত এই মেলায় জিলাপী বিক্রি করে চলেছেন তিনি। মেলায় এক দিনে ১০ মণ জিলাপী বিক্রি করে থাকেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও টাঙ্গাইল পাঁচআনী-ছয়আনী বাজারের চেয়েও তার জিলাপীর দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার জিলাপী অনেক সুস্বাদু ও ভেজালমুক্ত। প্রতি কেজি জিলাপী তিনি ১৮০ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন।
টাঙ্গাইল পৌরসভার এনায়েতপুর এলাকার কুমার নিখিল চন্দ্র পাল (৪০) জানান, কুমারের এই ব্যবসা তাদের শত শত বছরের। বৈশাখী মেলায় তিনি ২০ বছর যাবত মাটির খেলনা বিক্রি করে আসছেন। বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন রঙ-বেরঙের মাটির ব্যাংক, ফুলদানি ও মাটির হাড়ি বিক্রি করে থাকেন। মেলায় প্রতিবছর তিনি গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন।
দেলদুয়ারের পাথরাইল থেকে প্রথম মেলায় আসা চিনির সাজ ও খই ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র সাহা (৫০) জানান,  পুরাতন ব্যবসায়ী হলেও কালীবাড়ী বৈশাখী মেলায় তিনি এবার প্রথম এসেছেন। মেলায় এসে বিক্রি ভালো হওয়ায় তিনি বেশ খুশি।
মেলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা জীবন কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, কালীবাড়ী মন্দিরে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে। শত বছরের পুরাতন মেলা শুধু টাঙ্গাইলে না দেশের অনেক স্থানে পাওয়া প্রায় অপ্রতুল।
তিনি বলেন, বাংলা ১৩১৯ সালে তৎকালীন সময়ে স্থানীয় সাব রেজিস্ট্রার কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার তার বাবা ও মা কে উৎস্বর্গ করে এই কালীবাড়ী মন্দির স্থাপন করেন। সেই থেকে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, বৈশাখী মেলা বা বৈশাখের মেলা হচ্ছে একটি বাঙালি উৎসব মেলা, যা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে আয়োজিত হয়। এটি একটি সার্বজনীন উৎসব, যা বর্তমানে বাংলাদেশের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসী কর্তৃক প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের সাথে আয়োজন করা হয়।
ইতিহাস পন্ডিতেরা মনে করেন মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সন চালু করেন ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর থেকে হিজরি, চন্দ্রাসন ও ইংরেজি সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয় বলে জানা যায়। নতুন এ সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত থাকলেও বঙ্গাব্দ হিসেবেই তা পরিচিতি পায়। বাংলা নববর্ষ সম্রাট আকবরের সময় থেকে পালন করা হত। ওই সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূস্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত। মেলা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো এ উপলক্ষে। পরবর্তী সময়ে বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করা হতো, সে মেলাকে ‘বৈশাখী মেলা’ নামে নামকরণ করা হয়।