টাংগাইলের সখীপুর-গারোবাজার সড়ক সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে নিজ টাকায় মেরামত করছেন যুবলীগ নেতা
- আপডেট সময় : ০৯:০৯:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ এপ্রিল ২০১৮ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
সখীপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের সখীপুর বাজার থেকে ঘাটাইলের গারোবাজার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও আগামী পাঁচ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি পেয়েছেন হক ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি সংস্থা। ওই সংস্থার মালিক হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বাদল। নয় কোটি ৩৪ লাখ টাকার এ কাজটি ঠিকাদারের সঙ্গে এলজিইডির চুক্তি সই হয় ২০১৭ সালের ২০ জুন। চুক্তি অনুয়ায়ী ওই ঠিকাদার গত নয় মাসে ওই সড়কটি সংস্কার করলেও শুধু তিনটি স্থানে ৫৭০ মিটার গর্ত অংশ বাদ রাখেন। ওই ৫৭০ মিটার সড়কটি খানাখন্দে ভরা। আগামী কয়েক মাসেও ওই ৫৭০ মিটার ভাঙা সড়ক মেরামতের কোনো সম্ভাবনাও নেই। সখীপুর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর তালুকদার ওইসব গর্ত মেরামতের উদ্যোগ নেন। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ওই সড়কের কয়েকটি বড় গর্ত ভরাট করে সাময়িক যান চলাচলের ব্যবস্থা করেন। কাজ চলাকালীন সময়ে রাস্তার পাশে ‘জনস্বার্থে নিজ অর্থায়নে রাস্তা মেরামত চলছে’ এ ধরনের একটি ব্যানার সাঁটিয়ে রাখেন।
জাহাঙ্গীর তালুকদার বলেন, সখীপুর পৌরসভার সীমানার ভেতরে সড়কে কোথাও কোন গর্ত থাকলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ওই গর্ত বালু ও খোয়া দিয়ে ভরাট করে দেই। তিনি দাবি করেন তিনি নিজের পকেটের টাকায় গত পাঁচ বছরে তিনি কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের গর্ত ভরাট করেছেন। কেন নিজের পকেটের টাকায় সড়ক উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পৌরবাসীর সেবা করে মরতে চাই। আগামীতে দল আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করা ইচ্ছা আছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই সড়কের খাদ্যগুদাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই গর্তে এক ট্রাক ইট ও এক ট্রাক বালু ফেলা হচ্ছে। যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর তালুকদার লুঙ্গি পড়ে চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে ওই সড়কের গর্তগুলো ভরাটের তদারকি করছেন। কাজ করার পাশে সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে রেখেছেন। আশপাশের লোকজন ভিড় জমাচ্ছে। গর্তের পাশের দোকানদার শমসের আলী বলেন, রাস্তার ঠিকাদার কাজ করছেন না, সরকার দেখেও দেখছেন না। পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান চোখ বুজে আছেন। মানুষের প্রতিদিনের দুর্ভোগ কমাতে জাহাঙ্গীর তালুকদার এগিয়ে এসেছেন এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।
সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকালও অনেক কষ্টে এ অংশ পার হয়েছি। আজকে সহজেই পার হতে পারলাম। ভালো লাগল।
সখীপুর সরকারি পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান জানান, খাদ্যগুদামের পাশে সড়কে এতোই ভাঙাচুরা যে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে আসতেও কষ্ট হয়।
ওই সড়কের ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বলেন, সখীপুর-গারোবাজার সড়কের তিনটি স্থানে ৫৭০ মিটার সড়ক বেশি ভাঙা। কার্পেটিং করলে টিকবে না। তাই এলজিইডি বিভাগ ওই তিন স্থানে আরসিসি ঢালাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমার ৩০ কিলোমিটার সড়ক থেকে কিছুদিন আগে ৫৭০ মিটার সড়ক কেটে নেওয়া হয়েছে। ফলে ওই ৫৭০ মিটারে আমার কোনো দায়িত্ব নেই। তবে এ সড়ক সংস্কারে কেউ এগিয়ে এলে তাঁকে স্বাগত জানাই।
টাঙ্গাইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম মুঠোফোনে বলেন, শিগগিরই ওই ৫৭০ মিটার সড়ক সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এরপরেও কেউ সংস্কারে এগিয়ে এলে আমরা তো আর বাধা দিতে পারি না।
সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদার বলেন, জাহাঙ্গীর তালুকদার যদি সংস্কারে এগিয়ে আসে তাহলে যেন লোক দেখানো কাজ না করা হয়। সড়কটি যেন ভাল করে নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তারপরেও ভাল কাজে এগিয়ে আসার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই।
সখীপুর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুহানিফ আজাদ বলেন, পৌরসভার সীমানায় হলেও ওই সড়কটি এলজিইডির। সরকার ওই সড়কের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন। অন্য কারও ওই সড়ক নির্মাণ করার দরকার নেই। আমি আজই ঠিকাদারকে চাপ দেব। ঠিকাদার যেন তারাতারি সড়কটি সংস্কার করে।