ঢাকা ০১:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আবারো ফেরত গেলেন কারাগারে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:১৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৮ ৯ বার পড়া হয়েছে

দী্র্ঘ দুই মাস পর আজ শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগার থেকে বের করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।

পরে বিএসএমএমইউতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কারাগারে আবারো ফেরত পাঠানো হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার পর এই কারাগারেই রয়েছেন তিনি।

পুলিশের কালো রঙের একটি গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কারাগার থেকে বের করা হয় খালেদাকে। বহরের সামনে-পেছনে ছিল র‌্যাবের পাহারা।

সাড়ে ১১টার কিছু সময় পরই বিএসএমএমএইতে পৌঁছালে গাড়ি থেকে হোঁটেই নামেন সাদার উপর কালো প্রিন্টের সুতি শাড়ি পরা খালেদা জিয়া। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা লিফটেও ওঠেন হেঁটে।

খালেদা জিয়া কেবিনে যাওয়ার পর ডা. ওয়াহিদুর রহমান, এফ এম সিদ্দিকী ও মো. মামুনকে নিয়ে সেখানে যান বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, এরা সেই বোর্ডের সদস্য নন। ডা. মামুন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

বিএসএমএমইউর কর্মকর্তারা জানান, খালেদা জিয়ার এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্যাথলজি বিভাগ থেকেও হেঁটে হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান তিনি।

দুই ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কারাগারের পথে রওনা হয় একই গাড়ি; আগের মতোই পাহারা নিয়ে। পৌনে ২টার দিকে নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ঢোকে গাড়িটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাহারা দিয়ে বিএসএমএমইউতে আনার পর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল উনাকে নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। তা আমরা করেছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর উনাকে পুনরায় কারাগারে পৌঁছে দিতে হবে, আমার কাছে এটুকু তথ্য রয়েছে।”

বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ আলী আসগর মোড়ল সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ মেডিকেল বোর্ডই ঠিক করবে।

খালেদা বেরিয়ে যাওয়ার পর বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের উপদেশে একাধিক অংশের এক্সরে হয়েছে। আগামীকাল রিপোর্ট দেওয়া হবে।

“এর আগেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলো এবং আজকের পরীক্ষা মিলিয়ে চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”

খালেদার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান। বোর্ডে সদস্য রয়েছেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

এই মেডিকেল বোর্ড গত সপ্তাহে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসে জানিয়েছিল, তার অসুস্থতা গুরুতর নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।

বিএসএমএমইউতে উপস্থিত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি এই চিকিৎসায় তাদের কোনো আস্থা নেই।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন তিনি; তার ভাষ্য, তার নেত্রী মুক্তি পেলে নিজেই নিজের চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন।

মওদুদ ছাড়াও আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। দুই মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিও।

বিএনপির আরও অনেক নেতা-কর্মী হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। হাসপাতালের ফটকে স্লোগান দেওয়ার সময় কয়েকজনকে আটকও করা হয়।

অসুস্থতার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বিএনপি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছিল। খালেদা বন্দি হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারী কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আবারো ফেরত গেলেন কারাগারে

আপডেট সময় : ১১:১৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৮

দী্র্ঘ দুই মাস পর আজ শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগার থেকে বের করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে।

পরে বিএসএমএমইউতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর কারাগারে আবারো ফেরত পাঠানো হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় দেওয়ার পর এই কারাগারেই রয়েছেন তিনি।

পুলিশের কালো রঙের একটি গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কারাগার থেকে বের করা হয় খালেদাকে। বহরের সামনে-পেছনে ছিল র‌্যাবের পাহারা।

সাড়ে ১১টার কিছু সময় পরই বিএসএমএমএইতে পৌঁছালে গাড়ি থেকে হোঁটেই নামেন সাদার উপর কালো প্রিন্টের সুতি শাড়ি পরা খালেদা জিয়া। ৭৩ বছর বয়সী খালেদা লিফটেও ওঠেন হেঁটে।

খালেদা জিয়া কেবিনে যাওয়ার পর ডা. ওয়াহিদুর রহমান, এফ এম সিদ্দিকী ও মো. মামুনকে নিয়ে সেখানে যান বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, এরা সেই বোর্ডের সদস্য নন। ডা. মামুন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

বিএসএমএমইউর কর্মকর্তারা জানান, খালেদা জিয়ার এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্যাথলজি বিভাগ থেকেও হেঁটে হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে যান তিনি।

দুই ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কারাগারের পথে রওনা হয় একই গাড়ি; আগের মতোই পাহারা নিয়ে। পৌনে ২টার দিকে নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ঢোকে গাড়িটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাহারা দিয়ে বিএসএমএমইউতে আনার পর ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল উনাকে নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। তা আমরা করেছি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর উনাকে পুনরায় কারাগারে পৌঁছে দিতে হবে, আমার কাছে এটুকু তথ্য রয়েছে।”

বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ আলী আসগর মোড়ল সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ মেডিকেল বোর্ডই ঠিক করবে।

খালেদা বেরিয়ে যাওয়ার পর বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের উপদেশে একাধিক অংশের এক্সরে হয়েছে। আগামীকাল রিপোর্ট দেওয়া হবে।

“এর আগেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলো এবং আজকের পরীক্ষা মিলিয়ে চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”

খালেদার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান। বোর্ডে সদস্য রয়েছেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

এই মেডিকেল বোর্ড গত সপ্তাহে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসে জানিয়েছিল, তার অসুস্থতা গুরুতর নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।

বিএসএমএমইউতে উপস্থিত বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারি এই চিকিৎসায় তাদের কোনো আস্থা নেই।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন তিনি; তার ভাষ্য, তার নেত্রী মুক্তি পেলে নিজেই নিজের চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবেন।

মওদুদ ছাড়াও আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। দুই মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথিও।

বিএনপির আরও অনেক নেতা-কর্মী হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছিলেন, কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। হাসপাতালের ফটকে স্লোগান দেওয়ার সময় কয়েকজনকে আটকও করা হয়।

অসুস্থতার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বিএনপি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছিল। খালেদা বন্দি হওয়ার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারী কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি।