ঢাকা ০১:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কৃষকের জমি জবর দখলের অভিযোগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮ ১১ বার পড়া হয়েছে

প্রভাব খাটিয়ে টাঙ্গাইলের সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলমালিরচালা গ্রামের এক বৃদ্ধ কৃষকের ফসলি জমি জবর দখল করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধ কৃষক হলেন আমজাদ হোসেন। শুধু জমি দখলই নয়, প্রভাবশালীরা ওই বৃদ্ধের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি ও জমি দখলে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জানা গেছে, জেলার সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলমালিরচালা (গায়েন আলীর মোড়) গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন একই এলাকার গিয়াস উদ্দিন ও তাদের ভাইদের কাছ থেকে ১৯৮৩ সালে এক একর ৯১শতক কৃষিজমি কিনে নেন। পরবর্তীতে এ জমিটি আমজাদ হোসেনের নামে নামজারিও করা হয়। এরপর থেকে আমজাদ হোসেন হালনাগাদ ভূমি রেকর্ড করে নিয়মিত ভূমিকর দিয়ে আসছিলেন। আমজাদ হোসেন বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিবেশী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল করিম সরকারের ছেলে খোরশেদ আলম, প্রকৌশলী আবদুল খালেক ও খয়ের উদ্দিন ১৫ বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকায় ওই জমিটি লিজ নেয়। লিজের (বন্ধক) সময় শেষ হলে প্রায় ৮ বছর ধরে তারা জমিটি দখলে নিয়ে সীমানা খুঁটি দিয়েছে। কথা ছিল অতিরিক্ত সময়ে তারা আরও ৫০ হাজার টাকা দিবে; তাতো দেয়নি। উপরন্ত আমাকে এ জমিতে যেতে নিষেধ করে টাঙ্গাইল আদালতে (পি-৪১৮/২০১৮ নং মোকদ্দমা) গত ৮ মে খোরশেদ আলম বাদি হয়ে মামলা করেছেন। এখন জমির দাম বেড়েছে। ওই জমির দাম প্রায় অর্ধকোটি টাকা হবে বলেও দাবি করেন কৃষক আমজাদ।

সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে বৃদ্ধ আমজাদ হোসেন তার জমির কাগজপত্র দেখান। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ফুলমালিরচালা মৌজার এসএ ৮২/১১৩ খতিয়ানের এসএ ৫৯০, ৫৮৯,৫৯৪ ও ৬২৪ দাগের এক একর ৫৪ শতক জমি বৃদ্ধের নামে হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে ঘাটাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া সুলতানা ও ধলাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ্ ইলিয়াছ মিয়ার কাছে যোগাযোগ করলে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরহাদ আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মালেক ও আবদুল মান্নান বলেন, জমি দখলের বিষয়ে কয়েকদফা শালিশী বৈঠকও হয়েছে। ওই গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মজিবর রহমান, সুরুজ আলী, সুমেদ আলী ও ইছমত আলী বলেন, স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, নাশর উদ্দিনসহ চার ভাইয়ের কাছ থেকে দীর্ঘদিন আগে বৃদ্ধ জমিটি কিনেছেন। জমি বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, তারা চার ভাইয়ে মিলে বৃদ্ধ আমজাদের কাছে জমিটি বিক্রি করেছিলেন। এছাড়াও ওই জমিটি বৃদ্ধ আমজাদ হোসেনের যে, সে ব্যাপারে এলাকার অসংখ্য লোক এ প্রতিনিধির কাছে বলেছেন।

বৃদ্ধের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন বলেন, খোরশেদ আলমের লোকজন প্রকাশ্যে তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। জায়গা দখলের প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমজাদ হোসেন সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জমি দখলে নেয়ায় অভিযুক্ত খোরশেদ আলম বলেন, ওই জমির সঙ্গে তাদের অনেক জমি রয়েছে। তবে জমিটি কৃষক আমজাদের কাছ থেকে তারা অনেক বছর আগেই কিনে নিয়েছেন। কৃষক আমজাদ বলেন, জমিতো আমি বেচি (বিক্রি) নাই; ক্যামনে হ্যারা (তারা) জমির মালিক। আমি গরীব মানুষ আপনেরা বিচার করবেন! দাতা হিসেবে এ জমির দলিল আমজাদ হোসেন তাদের নামে সাফ কওলা করে দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে খোরশেদ আলম জমির অন্যান্য কাগজপত্রাদি তাদের আছে দাবি করে বলেন, দলিল করতে একটু দেরি হওয়ায় আমজাদ তালবাহানা করছেন। জায়গাটি আমরা বহুদিন ধরে ভোগদখল করে চাষবাস করে আসছি বৈধ মালিকানা আছে বলেই।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কৃষকের জমি জবর দখলের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৯:৩৪:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮

প্রভাব খাটিয়ে টাঙ্গাইলের সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলমালিরচালা গ্রামের এক বৃদ্ধ কৃষকের ফসলি জমি জবর দখল করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী বৃদ্ধ কৃষক হলেন আমজাদ হোসেন। শুধু জমি দখলই নয়, প্রভাবশালীরা ওই বৃদ্ধের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি ও জমি দখলে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জানা গেছে, জেলার সখীপুর ও ঘাটাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলমালিরচালা (গায়েন আলীর মোড়) গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন একই এলাকার গিয়াস উদ্দিন ও তাদের ভাইদের কাছ থেকে ১৯৮৩ সালে এক একর ৯১শতক কৃষিজমি কিনে নেন। পরবর্তীতে এ জমিটি আমজাদ হোসেনের নামে নামজারিও করা হয়। এরপর থেকে আমজাদ হোসেন হালনাগাদ ভূমি রেকর্ড করে নিয়মিত ভূমিকর দিয়ে আসছিলেন। আমজাদ হোসেন বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রতিবেশী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত আবদুল করিম সরকারের ছেলে খোরশেদ আলম, প্রকৌশলী আবদুল খালেক ও খয়ের উদ্দিন ১৫ বছরের জন্য ২৫ হাজার টাকায় ওই জমিটি লিজ নেয়। লিজের (বন্ধক) সময় শেষ হলে প্রায় ৮ বছর ধরে তারা জমিটি দখলে নিয়ে সীমানা খুঁটি দিয়েছে। কথা ছিল অতিরিক্ত সময়ে তারা আরও ৫০ হাজার টাকা দিবে; তাতো দেয়নি। উপরন্ত আমাকে এ জমিতে যেতে নিষেধ করে টাঙ্গাইল আদালতে (পি-৪১৮/২০১৮ নং মোকদ্দমা) গত ৮ মে খোরশেদ আলম বাদি হয়ে মামলা করেছেন। এখন জমির দাম বেড়েছে। ওই জমির দাম প্রায় অর্ধকোটি টাকা হবে বলেও দাবি করেন কৃষক আমজাদ।

সরেজমিন ওই এলাকায় গেলে বৃদ্ধ আমজাদ হোসেন তার জমির কাগজপত্র দেখান। কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ফুলমালিরচালা মৌজার এসএ ৮২/১১৩ খতিয়ানের এসএ ৫৯০, ৫৮৯,৫৯৪ ও ৬২৪ দাগের এক একর ৫৪ শতক জমি বৃদ্ধের নামে হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে ঘাটাইল উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া সুলতানা ও ধলাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ্ ইলিয়াছ মিয়ার কাছে যোগাযোগ করলে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরহাদ আলী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মালেক ও আবদুল মান্নান বলেন, জমি দখলের বিষয়ে কয়েকদফা শালিশী বৈঠকও হয়েছে। ওই গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মজিবর রহমান, সুরুজ আলী, সুমেদ আলী ও ইছমত আলী বলেন, স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন, নাশর উদ্দিনসহ চার ভাইয়ের কাছ থেকে দীর্ঘদিন আগে বৃদ্ধ জমিটি কিনেছেন। জমি বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, তারা চার ভাইয়ে মিলে বৃদ্ধ আমজাদের কাছে জমিটি বিক্রি করেছিলেন। এছাড়াও ওই জমিটি বৃদ্ধ আমজাদ হোসেনের যে, সে ব্যাপারে এলাকার অসংখ্য লোক এ প্রতিনিধির কাছে বলেছেন।

বৃদ্ধের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন বলেন, খোরশেদ আলমের লোকজন প্রকাশ্যে তাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। জায়গা দখলের প্রতিকার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমজাদ হোসেন সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জমি দখলে নেয়ায় অভিযুক্ত খোরশেদ আলম বলেন, ওই জমির সঙ্গে তাদের অনেক জমি রয়েছে। তবে জমিটি কৃষক আমজাদের কাছ থেকে তারা অনেক বছর আগেই কিনে নিয়েছেন। কৃষক আমজাদ বলেন, জমিতো আমি বেচি (বিক্রি) নাই; ক্যামনে হ্যারা (তারা) জমির মালিক। আমি গরীব মানুষ আপনেরা বিচার করবেন! দাতা হিসেবে এ জমির দলিল আমজাদ হোসেন তাদের নামে সাফ কওলা করে দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে খোরশেদ আলম জমির অন্যান্য কাগজপত্রাদি তাদের আছে দাবি করে বলেন, দলিল করতে একটু দেরি হওয়ায় আমজাদ তালবাহানা করছেন। জায়গাটি আমরা বহুদিন ধরে ভোগদখল করে চাষবাস করে আসছি বৈধ মালিকানা আছে বলেই।