টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নদীতে বাধ দিয়ে ইটভাটার মাটি সরবরাহ
- আপডেট সময় : ০৭:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ মে ২০১৮ ২৭ বার পড়া হয়েছে
মাটি ব্যবসায়ীরা ভারী যানবাহন চালিয়ে গ্রামীণ জনপথ ধ্বংসের সাথে সাথে এবার নজর দিয়েছে নদীর দিকে। তারা উপজেলার কোট বহুরিয়া এলাকায় লৌহজং নদীতে আড়াআড়ি দুটি বাঁধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপথে বাধার সৃষ্টি করেছে।। এতে নদীতে নৌযান চলাচল ও পানির প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মাছের অবাধ বিচরণ।
এলাকাবাসী জানান, কোট বহুরিয়া ও দেওহাটা এলাকায় ২১টি ইটভাটা রয়েছে। ওইসব ভাটাসহ আশেপাশের ভাটায় মাটি নিতে কোট বহুরিয়া এলাকার ফজল ব্রিকসের পশ্চিম পার্শ্বে লৌহজং নদীতে স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা বাঁধ দেন।
স্থানীয়রা জানান, আগে ব্যবসায়ীরা নদীর পূর্ব পাড় ও পাড় সংলগ্ন জমির মাটি কেটে নিতেন। সেখানকার মাটি শেষ হওয়ার পর তাঁরা নজর দেন নদীর পশ্চিম পারে অবস্থিত মীর দেওহাটা ও মুন্দিরা পাড়ার আবাদি জমি থেকে মাটি আনতে। এজন্য তাঁরা পাঁচ বছর আগে ইটভাটার দক্ষিণ পাশে এবং দুই বছর আগে উত্তর পাশের বাঁধটি দিয়েছেন। বাঁধ দুটির দুরত্ব প্রায় ১০০ গজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধের কারণে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে পানি ঠিকমত প্রবাহিত হতে পারছেনা। একটি বাঁধের মাঝখানের কিছু অংশ কেটে দেয়া হয়েছে। অপর বাঁধের নীচে পাইপ বসানো হয়েছে। বাঁধের কারণে উত্তর পাশে কচুরীপানা জমে আছে। এছাড়া উত্তর পাশের চেয়ে দক্ষিণ পাশে (ভাটার দিক) পানির উচ্চতা প্রায় তিন ফুট কম।
কোট বহুরিয়া গ্রামের জিন্নাহ মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ‘দেওহাটা গ্রামের আরফান মেম্বার (প্রয়াত) আর কতজন মিলা আগে নদীর পাড় কাটছে। আর পরাই পাঁচ বছর ধইর্যা গাঙে বান দিছে। এইবার বান দিছে পরাই ছয় মাস আগে। ইটখোলার যারা মালিক তারাই বান দিয়্যা মাটি নিতাছে।’
ফজল ব্রিকসের মালিক ফজল মিয়ার ছেলে জব্বার হোসেন (৩৫) জানান, বাঁধ দিয়ে নদীর পশ্চিম পার থেকে তাঁদের ভাটাসহ স্থানীয় ২১টি ইটভাটায় মাটি নেয়া হয়। মাটি আনার সঙ্গে দেওহাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হাই, স্থানীয় শহিদ মিয়া, শওকত আলী, নুরুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, রুকন মিয়া ও জুয়েলসহ আরও অনেকে জড়িত। যারা স্থানীয় জমির মালিকদের কাছ থেকে মাটি কিনে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, আগে একটি বাঁধ দিয়ে সবাই মাটি আনলেও দুই বছর ধরে দক্ষিণ পাশের বাঁধ দিয়ে মাটি ব্যবসায়ী ও ইটভাটার মালিক শহিদ মিয়া একাই মাটি আনেন। শহিদের ব্যক্তিগত তিনটি ভেকু (স্থানীয়দের ভাষায়) বা এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) আর ১১টি ট্রাক রয়েছে। ওইসব ট্রাকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ ট্রাক মাটি আনতেন। ওই ট্রাকগুলোসহ বাঁধ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ ট্রাকযোগে ৭০ হাজার ঘনফুট মাটি আনা হতো।
স্থানীয় একটি ইটভাটার শ্রমিক কবির হোসেন জানান, বাঁধের কারণে একপাশে পানি বেশি রয়েছে। এজন্য একপাশে মাছ আটকা পড়ে আছে। এখন নদীতে যে পানি আছে তাতে নৌকা চলতো। কিন্তু নদীতে বাঁধ দেয়াতে নৌকা চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য স্টাইল ব্রিকসের মালিক আব্দুল হাই জানান, তিনি ১৫ দিন আগে বাঁধ দিয়ে মাটি আনা বন্ধ করেছেন। এখন শুধু ফজল ব্রিকসে মাটি নেয়া হয়। আর কে কে মাটি নেন তা তিনি জানেননা। তাঁর সঙ্গে স্থানীয় শওকত, নুরুল ইসলাম, ফরিদ মিয়া, রুকন উদ্দিন ও জুয়েল ওই বাঁধ দিয়ে মাটি আনতেন বলে স্বীকার করেন। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।