ঢাকা ১০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির রমরমা বাণিজ্য! রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে

সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক:  টাঙ্গাইলে গোপনে একটি  অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি পাঠাবে বলে টাঙ্গাইল সদরের বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকদের আশান্বিত করেন প্রতারক মাজহারুল ইসলাম স্বপন। তার ছেলে ইউরোপে থাকে বলে এলাকার মানুষ সহজে তার কথা বিশ্বাস করে ফেলে। জনপ্রতি চুক্তি হয় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে ১৬জন যুবক হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য মাথাপিছু ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা প্রাথমিকভাবে স্বপনকে প্রদান করেন। বাকি টাকা ভিসা এবং বিমানের টিকিট পাওয়ার পর পরিশোধ করবেন বলে সম্মতি হন উভয়পক্ষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো ১৬ জনের একজনও হাঙ্গেরি যেতে পারে নাই। ভুক্তভোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মনি, সাফি, হুমায়ূন কবির, শাওন, আরিফ, সাহেদ ও দর্পণ। বাকিদের নাম এখনও জানাযায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাজহারুল ইসলাম স্বপন মীরের বেতকা এলাকাকে মিনি ইউরোপ বানিয়ে ফেলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকাবাসীর মন জয় করেন। ছেলে জার্মানিতে থাকে বলে এলাকাবাসীও তার কথা খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে। ছেলেকে ভিডিওকলে রেখে বিদেশগামীদের প্রলোভন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। আর সহজেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক স্বপন।
পরবর্তীতে ইড়রোপ নিতে না পারলেও প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন না তিনি। এতে নানা রকম সমস্যায় ও কষ্টে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। কেউ কেউ ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য ধার করে টাকা দিয়েছেন, আজ তারা অনেকেই বাড়ি ছাড়া উল্টো পাওনাদারদের চাপে। এছাড়া স্বপনের শহরে প্রভাব থাকায় গ্রামের নিরীহ মানুষ তার কাছ থেকে টাকা নিতে পারছে না।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, স্বপনদের পারিবারিকভাবেই হোমিওপ্যাথির ব্যবসা ছিল। সেই সময় হতেই বিভিন্ন অনিয়মের জন্য তাকে পুলিশি ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে একাধিকবার। বিদেশে নিতে না পাড়ায় দুই একজনের টাকা ফেরত দিলেও বাকিদের টাকা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এদিকে ওই টাকা দিয়ে ঢাকা ও টাঙ্গাইল শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রয় করেছেন। সর্বসাকুল্যে হারানো ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে নিবেদন করছেন প্রতারক স্বপনের নিকট হতে তাদের পাওনা টাকা উদ্ধার করে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, মীরের বেতকা এলাকায় স্বপন অফিস করেছিল কিন্তু পাওনাদারদের চাপের কারণে সেখানে অফিস বন্ধ করে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় একটি ফ্ল্যাটের ২য় তলায় কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে চলছে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি। সাইনবোর্ড না থাকায় বাইরে থেকে বুঝার কোন উপায় নেই ওটা অফিস। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন এভাবেই অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে তারা। রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব।
এ ব্যাপারে মাজহারুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি কোন অফিস নেয়নি। শুধু এখানে একটু সময় কাটাই। ওই পরিচিত লোকজন ধরলে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বিদেশ পাঠাই। ফোনেই তার সব কাজ চলে। এটা কোন ট্রাভেল এজেন্সি অফিস নয়।
উল্লেখ্য, দেশে অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যােগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ উদ্যােগ বাস্তবায়নে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাযায়, ২০২৪ সালের ৯ জুলাই অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ ( আটাব)। দেশে লাইসেন্স বিহীন ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা অনেক। এছাড়া তারা সরকারকে কোন প্রকার রাজস্ব দিচ্ছে না। ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে যেকোন সময় অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টাঙ্গাইলে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির রমরমা বাণিজ্য! রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট সময় : ১০:১৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক:  টাঙ্গাইলে গোপনে একটি  অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরি পাঠাবে বলে টাঙ্গাইল সদরের বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকদের আশান্বিত করেন প্রতারক মাজহারুল ইসলাম স্বপন। তার ছেলে ইউরোপে থাকে বলে এলাকার মানুষ সহজে তার কথা বিশ্বাস করে ফেলে। জনপ্রতি চুক্তি হয় ১৮ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে ১৬জন যুবক হাঙ্গেরি যাওয়ার জন্য মাথাপিছু ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা প্রাথমিকভাবে স্বপনকে প্রদান করেন। বাকি টাকা ভিসা এবং বিমানের টিকিট পাওয়ার পর পরিশোধ করবেন বলে সম্মতি হন উভয়পক্ষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো ১৬ জনের একজনও হাঙ্গেরি যেতে পারে নাই। ভুক্তভোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মনি, সাফি, হুমায়ূন কবির, শাওন, আরিফ, সাহেদ ও দর্পণ। বাকিদের নাম এখনও জানাযায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাজহারুল ইসলাম স্বপন মীরের বেতকা এলাকাকে মিনি ইউরোপ বানিয়ে ফেলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলাকাবাসীর মন জয় করেন। ছেলে জার্মানিতে থাকে বলে এলাকাবাসীও তার কথা খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলে। ছেলেকে ভিডিওকলে রেখে বিদেশগামীদের প্রলোভন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। আর সহজেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক স্বপন।
পরবর্তীতে ইড়রোপ নিতে না পারলেও প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও পাওনা টাকা পরিশোধ করছেন না তিনি। এতে নানা রকম সমস্যায় ও কষ্টে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। কেউ কেউ ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য ধার করে টাকা দিয়েছেন, আজ তারা অনেকেই বাড়ি ছাড়া উল্টো পাওনাদারদের চাপে। এছাড়া স্বপনের শহরে প্রভাব থাকায় গ্রামের নিরীহ মানুষ তার কাছ থেকে টাকা নিতে পারছে না।
ভুক্তভোগীরা আরও জানান, স্বপনদের পারিবারিকভাবেই হোমিওপ্যাথির ব্যবসা ছিল। সেই সময় হতেই বিভিন্ন অনিয়মের জন্য তাকে পুলিশি ঝামেলায়ও পড়তে হয়েছে একাধিকবার। বিদেশে নিতে না পাড়ায় দুই একজনের টাকা ফেরত দিলেও বাকিদের টাকা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এদিকে ওই টাকা দিয়ে ঢাকা ও টাঙ্গাইল শহরে দুটি ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রয় করেছেন। সর্বসাকুল্যে হারানো ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে নিবেদন করছেন প্রতারক স্বপনের নিকট হতে তাদের পাওনা টাকা উদ্ধার করে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, মীরের বেতকা এলাকায় স্বপন অফিস করেছিল কিন্তু পাওনাদারদের চাপের কারণে সেখানে অফিস বন্ধ করে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় একটি ফ্ল্যাটের ২য় তলায় কয়েকটি রুম ভাড়া নিয়ে চলছে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি। সাইনবোর্ড না থাকায় বাইরে থেকে বুঝার কোন উপায় নেই ওটা অফিস। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন এভাবেই অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে তারা। রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব।
এ ব্যাপারে মাজহারুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি কোন অফিস নেয়নি। শুধু এখানে একটু সময় কাটাই। ওই পরিচিত লোকজন ধরলে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বিদেশ পাঠাই। ফোনেই তার সব কাজ চলে। এটা কোন ট্রাভেল এজেন্সি অফিস নয়।
উল্লেখ্য, দেশে অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যােগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ উদ্যােগ বাস্তবায়নে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাযায়, ২০২৪ সালের ৯ জুলাই অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ ( আটাব)। দেশে লাইসেন্স বিহীন ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা অনেক। এছাড়া তারা সরকারকে কোন প্রকার রাজস্ব দিচ্ছে না। ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে যেকোন সময় অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।