
সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক : আগামীকাল বুধবার (২১জুন) টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সরাঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়রসহ তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, তিন জন জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এ দিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় নির্বাচনী আলোচনা হচ্ছে।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, বাসাইল পৌরসভা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। সে নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ মেয়র নির্বাচিত হন। দলের উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ কে মোকাবেলা করতে হচ্ছে উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ উপজেলা শাখার সভাপতি রাহাত হাসান টিপুকে।
আব্দুর রহিম টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) অনুসারী। তিন জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৩৭।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগে রয়েছে তীব্র কোন্দল। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী অলিদ ইসলামের নেতৃত্বে বড় একটি অংশ রয়েছে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এই কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এনামুল করিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবুও তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে সক্রিয় নির্বাচনের মাঠে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের নির্বাচনী এলাকা বাসাইল। তাই তিনিসহ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন। ২০১৩ সাল ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে এনামুল করিম এবং রাহাত হাসান নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। উভয়ই সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এবার জয়ের জন্য উভয়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তবে দলীয় কোন্দলের প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছি। তাই দলের সকল স্তুরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা আমার সাথে আছেন। তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদি।
মেয়র প্রার্থী এনামুল করিম জানান, উপজেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মি তার সাথে রয়েছেন। ৭০ ভাগ ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তিনি বিপুল ভোটের নির্বাচিত হবেন।
কৃষক শ্রমিক জনতালীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তার দলের প্রার্থী রাহাত হাসানকে বিজয়ী করার জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। দলের নেতারা জানান, এটি দলের প্রতিষ্ঠাতার নির্বাচনী এলাকা। তাই মেয়র পদে তাদের দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তারা সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন। রাহাত হাসান বলেন, গত নির্বাচনে সামান্য ভোটে হেরেছিলাম। ১০ বছর ধরে মাঠে রয়েছি। বাসাইলের জনগণ আমাকে চায়। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান জানান, নির্বাচন সুষ্ঠ করে নির্বাচন কমিশনের ১০ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করবে। এক জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১০ কেন্দ্রে ১০ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশসহ, দুই প্লাটুন বিজিবি এবং তিনটি র্যাবের টিম দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে কারিগরি মোবাইল টিমের সদস্য থাকবে। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।