সাঁতরে!!! প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি!!!
- আপডেট সময় : ০৪:৫২:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ জুন ২০১৮ ৩২ বার পড়া হয়েছে
শুধুই অভিযানের মনোভাব থেকে লকঁত তাঁর এ অভিযানে অংশ নিচ্ছেন না। এর পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার এক মহান উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানীদের একটি দল লকঁতের এ অভিযানের সময় সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাব, অতিরিক্ত ব্যায়ামের জন্য মানুষের হৃৎপিণ্ডের আচরণের ধরন এবং ফুকুশিমার পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ সমুদ্রে কী ক্ষতি করছে, তার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
বেন লকঁত। প্রসিদ্ধ ফরাসি সাঁতারু। বর্তমানে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ১৯৯৮ সালে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার পথ সাঁতরে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। এবারও তিনি করতে যাচ্ছেন আরেক নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এবার পাড়ি দেবেন প্রশান্ত মহাসাগর। পাড়ি দেবেন নয় হাজার কিলোমিটারের মতো।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫১ বছর বয়সী লকঁত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এবার প্রশান্ত মহাসাগর সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার তিনি জাপানের চোসি উপকূল থেকে সাঁতার শুরু করেছেন। প্রতিদিন আট ঘণ্টা সাঁতরাবেন এ অকুতোভয় সাঁতারু। পুরো প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছার মধ্য দিয়ে লকঁতের এ অভিযান সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রশান্ত জয় নিয়ে লকঁতের টুইটবিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, লকঁতকে এ সাঁতার অভিযানে ভয়াবহ সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে দানবীয় হাঙরের আক্রমণ, ঝড়, জেলিফিশের ঝাঁক এবং ভয়াবহ ঠান্ডা পানি।
শুধুই অভিযানের মনোভাব থেকে লকঁত তাঁর এই অভিযানে অংশ নিচ্ছেন না। এর পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার এক মহান উদ্দেশ্য। বিজ্ঞানীদের একটি দল লকঁতের অভিযানের সময় সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের প্রভাব, অতিরিক্ত ব্যায়ামের জন্য মানুষের হৃৎপিণ্ডের আচরণের ধরন এবং ফুকুশিমার পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞ সমুদ্রে কী ক্ষতি করছে, তার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
প্রশান্ত মহাসাগর অভিযান শুরু করার আগে ফরাসি এ সাঁতারুকে ছয় বছর ধরে করতে হয়েছে কঠোর অনুশীলন। এ সময় প্রায় প্রতিদিনই তাঁকে কয়েক ঘণ্টা করে উন্মুক্ত জলাশয়ে সাঁতারের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো অনুশীলন করতে হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকূল সব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মনকে শক্ত করতে হয়েছে ‘প্রত্যক্ষকরণ ও পৃথক্করণের’ অনুশীলন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে লকঁত বলেন, ‘এমন সব অভিযানে শারীরিক শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তি বেশি প্রয়োজন। এসব অভিযানে বের হওয়ার আগে আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে সক্ষম।’
১৯৯৮ সালে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিতে লকঁতকে সাঁতরাতে হয়েছিল ৬ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু হয়ে ফ্রান্সে গিয়ে শেষ হওয়া ওই অভিযান শেষে লকঁতের প্রথম উক্তি ছিল ‘আর না’। কিন্তু সাঁতারপাগল এ মানুষটির সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বেশি সময় লাগেনি। নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেন আরেকটি প্রতিজ্ঞার জালে। প্রস্তুত হতে থাকেন প্রশান্ত জয়ের লক্ষ্যে। যেমনটি তিনি বলেছিলেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে, ‘তিন থেকে চার মাসের মাথায় নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টে পরবর্তী অভিযানের জন্য সংকল্পবদ্ধ হই।’
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একক কোনো ব্যক্তি হিসেবে আটলান্টিক ও প্রশান্ত উভয় মহাসাগর প্রথম সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার কৃতিত্ব যোগ হবে লকঁতের ঝুলিতে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।