টাঙ্গাইল দেলদুয়ারে মা সমাবেশ।
- আপডেট সময় : ০৩:২৮:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ৩৭ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টারঃ “তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো ” নেপোলিয়নের সেই স্মরণীয় উক্তিকে সামনে রেখে “মা সমাবেশ” করেছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার নামে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। শনিবার সকালে ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুল, কোচিং শাখা ও কলেজ একাডেমিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর মায়েদেরকে নিয়ে “মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রছাত্রীর আদর্শ জীবন গড়তে শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের মাঝে মুক্ত আলোচনা হয়। এসময় কয়েকশ শিক্ষার্থীর মা তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনটি ধাপে পৃথক শাখার শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ সমাবেসের আয়োজন করে। ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. রেজাউল করিম তার বক্তব্যে “ মা-সমাবেশের” গুরুত্ব ও আদর্শ শিক্ষার্থী হওয়ার ধাপগুলো আলোচনা করেন। তিনি বলেন শিক্ষিত মা যেমন শিক্ষিত জাতি দিতে পারে তেমনি একটি পারিবারিক শিক্ষালয় একজন মানুষকে আদর্শ শিক্ষা দিতে পারে। পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নৈতিক শিক্ষা শিশুর পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। একজন শিশু জন্মের পর থেকে কিশোর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পার করে মায়ের সাথে। অতএব আদর্শ শিক্ষার্থী গড়তে মায়েদের ভুমিকা অপরিহার্য। অসৎ সঙ্গে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ে। লেখাপড়া থেকে ঝরেপড়া রোধে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো, বাড়িতে পড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা, বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকা, মাদকমুক্ত রাখা ও সন্তানদের বিনোদনে রাখার প্রতি মায়েদেরকে আহবান জানান তিনি। এদিকে মেয়েদের বাল্যবিবাহ থেকে বিরত রাখতে নানা পরামর্শ ও ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরেন । বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক থাকবে বন্ধুর মতো। এতোটা কাছে থাকা উচিৎ যেন সন্তানরা বন্ধুর মতো বাবা মায়ের সাথে সব আলোচনা করতে পারে। ভ্রান্ত পথে যাওয়ার আগেই যেন বাবা-মা বুঝতে পারে তার গতিপথ। সন্তানদের সব কাজে উগ্র হয়ে বাঁধা না দিয়ে বরং সব কাজে হ্যা বলার পরামর্শ দেন তিনি। প্রথমে হ্যা বলে পরবর্তীতে ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরলে শিশুরা নিজ থেকে ওই কাজ থেকে সড়ে দাড়াবে। “চাকরী নেই এই কথার ভিত্তি নেই” উল্লেখ করে বলেন দেশে পর্যাপ্ত্ কাজের সুযোগ রয়েছে। বরং কাজ দেওয়ার মতো মেধাবীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন পড়ালেখা করলেই চাকরী করতে হবে ঠিক না। পড়া লেখা জ্ঞান অর্জনের জন্য। আর জ্ঞান অর্জন হলে সে যেকোনভাবে উপার্জন করতে পারবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষা দিলেই পাশ এ কথার ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ ব্যাপারে সজাগ। এগুলো প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে । সম্প্রতি জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রমাণ করছে সরকার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সন্তানের গতিপথ লক্ষ্য রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অভিভাবকদের যোগাযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন। এধরেনের সমাবেশ ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারে মাঝে মাঝেই হয়ে থাকে এবং অব্যহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এসময় অন্যন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও গঠনমুলক পরামর্শ তুলে ধরা হয়। মফস্বলে শিক্ষার হার ও মান বৃদ্ধি, নৈতিক শিক্ষা অর্র্জনসহ মধ্যবিত্ত- পরিবারে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে ২০০০ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার”। প্রতিনিয়ত ব্যতিক্রমী সব কার্যক্রম ও পরীক্ষার ফলাফলে আলোচনায় থাকছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশুদের ঝরে পড়া রোধে বিনা বেতন,অর্ধবেতন এমনকি উপবৃত্তিও দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। উপজেলায় বহুবার প্রমান দিয়েছে ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার একটি ব্যতিক্রমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেলদুয়ার উপজেলারে প্রাক্তন ইউএনও মো. শাহাদত হোসেন কবির বহবার প্রতিষ্ঠনটি কার্যক্রমে মুগ্ধ হয়েছেন। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক দোয়া মাহফিল, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হানিফুজ্জামান লিটনও প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ব্যতিক্রমি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেন।বর্তমানে পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষার্থী এ+ পাচ্ছে। এটাকে শত ভাগ এ+ নিশ্চিত করতে কাজ করছে একঝাক শিক্ষক শিক্ষিকা। উপজেলার শীর্ষ ফলাফলের অধিকাংশ ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবার থেকেই হয়েছে। ২০০৭ সালে উপজেলায় ফাজিল পরীক্ষায় মাস্টার্সে প্রথম স্টার মার্কস পায় ইমপ্রুভ কলেজ একাডেমীর ছাত্র নুর আলম ও মুস্তাফিজুর রহমান। ২০০৯ সালে উপজেলায় ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় প্রথম এ+ পায় সাদ্দাম হোসেন। ২০১২ সালে জেএসসিতে উপজেলায় প্রথম এ+ পায় উর্মী সরকার। ২০১৫ সালে কিন্ডার গার্টেন এসাসিয়েশন বৃত্তিতে উপজেলায় প্রথম হয় ধ্রব রাজবংশী ও ফাতেমা আক্তার উর্মী, ২০১৬ সালের পাথরাইলে বেসরকারী স্কুল থেকে সরকারি বৃত্তি পায় একমাত্র ইমপ্রুভ চাইল্ড কেয়ার স্কুলের ছাত্রী জেসমিন আক্তার লিলি। এ ফলাফল অব্যহ রয়েছে বলেও জানান তিনি।শিক্ষার্থীর পড়ার মান বজায় রাখতে প্রতি নিয়ত হোম ভিজিট, মোবাইল কমোনিকেশন, রাতে পড়ার টেবিলে শিক্ষার্থীরা আছে কি না সেজন্য রাতেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি পরিদর্শন করে থাকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তিনি আরো বলেন, পাঠ্য বই ও সার্টিফিকেট নির্ভর পড়ালেখা ভাবনা ছেড়ে সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হবে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিরোধ গড়ার আহবান জানান তিনি।