ঢাকা ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মৃতির পাতায় গুরু আজম খান

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮ ৩৩ বার পড়া হয়েছে

যুদ্ধ শেষে অন্য রকম গান নিয়ে এলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে সবার আগেই মনে পড়ে আজম খানের নাম। প্রথা ভাঙা গানগুলো জনে জনে মনে মনে ছড়িয়ে গেল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। নতুন দেশে, নতুন সময়ে যারা শৈশব কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল কৈশোরের দিকে, যারা কৈশোর পার হয়ে ছুটেছিল যৌবনের দিকে, কিংবা যারা যুবক, তারা দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করল আজম খানকে। ‘বাংলাদেশ’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ গানগুলো নিয়ে সে কি উন্মাদনা! আজম খান হয়ে উঠলেন পপগুরু।
দীর্ঘাঙ্গী এই মানুষটির মাথায় তখন বাবড়ি চুল। মুখে দাড়ি। বেলবটম প্যান্ট আর মোটা বেল্টে গড়ে উঠছে সে সময়কার ফ্যাশন। স্টাইলিশ আজম খান হয়ে উঠলেন তারুণ্যের অন্য নাম।
আজম খানের কথা বলতে গেলে একই সঙ্গে চলে আসে ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীরের কথা। মনে পড়ে নাজমা জামান এবং জিংগা শিল্পী গোষ্ঠীর কথা। বিজ্ঞজনদের সমালোচনা তারুণ্যের এই বাধভাঙা স্রোতের মুখে বাঁধ দিতে পারেনি। অন্য রকম গান তখন জায়গা করে নিচ্ছিল প্রচলিত গানের পাশাপাশি।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, ষাটের দশকে পাশ্চাত্যে প্রথা ভাঙা জীবনের বীজ রোপিত হয়েছিল। হিপ্পি, বিট আন্দোলন যেমন ছিল, তেমনি এলভিস প্রিসলি, বব ডিলান, রোলিং স্টোন, বিটলস-এর মতো গায়ক ও ব্যান্ডের মাধ্যমেও নতুন সুর আর ছন্দের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিল বিশ্ব। তারই পথ ধরে আমাদের দেশে এল পপ-সংস্কৃতি। আজম খানেই আমরা দেখলাম সে সংস্কৃতির পরিপূর্ণ রূপ।
মুক্তিযুদ্ধের পর যাঁরা আজম খানকে দেখেছেন, শুনেছেন তাঁর গান, তাঁরা তখন তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন এক রাগী যুবককে। কিন্তু যাঁরা মিশেছেন তাঁর সঙ্গে, তাঁরা জানেন বিনয়, সততা আর সুরের প্রতি ভালোবাসার আরেক নাম আজম খান। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার’, ‘সারা রাত জেগে জেগে’, ‘হৃদয় সাগর মরুভূমি’ গানগুলো একসময় শাসন করেছে বাংলাদেশ। তাঁর একটি কনসার্টে উপস্থিত হওয়ার জন্য কত কষ্ট করেই না টাকা জমাত সে যুগের কিশোর-তরুণেরা। কখনো কখনো বর্ষীয়ান কেউ কেউও সে সুরসাগরে মেলাত প্রাণ।
২০১১ সালের ৫ জুন আজম খান চলে গেছেন। ততদিনে নতুন নতুন ব্যান্ড, নতুন নতুন শিল্পী এসে গেছে নাগরিক বিনোদনের খিদে মেটাতে। তাই বলে কি আজম খান হারিয়ে গেলেন একেবারে?
সে প্রশ্ন না হয় পড়ে থাকল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়টাকে কাছে থেকে দেখেছি, তারা জানি, আমাদের মনজুড়ে ছিলেন তিনি, ছিলেন সৃজন ছন্দে আনন্দে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

স্মৃতির পাতায় গুরু আজম খান

আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ মে ২০১৮

যুদ্ধ শেষে অন্য রকম গান নিয়ে এলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে সবার আগেই মনে পড়ে আজম খানের নাম। প্রথা ভাঙা গানগুলো জনে জনে মনে মনে ছড়িয়ে গেল খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে। নতুন দেশে, নতুন সময়ে যারা শৈশব কাটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল কৈশোরের দিকে, যারা কৈশোর পার হয়ে ছুটেছিল যৌবনের দিকে, কিংবা যারা যুবক, তারা দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করল আজম খানকে। ‘বাংলাদেশ’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ গানগুলো নিয়ে সে কি উন্মাদনা! আজম খান হয়ে উঠলেন পপগুরু।
দীর্ঘাঙ্গী এই মানুষটির মাথায় তখন বাবড়ি চুল। মুখে দাড়ি। বেলবটম প্যান্ট আর মোটা বেল্টে গড়ে উঠছে সে সময়কার ফ্যাশন। স্টাইলিশ আজম খান হয়ে উঠলেন তারুণ্যের অন্য নাম।
আজম খানের কথা বলতে গেলে একই সঙ্গে চলে আসে ফিরোজ সাঁই, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীরের কথা। মনে পড়ে নাজমা জামান এবং জিংগা শিল্পী গোষ্ঠীর কথা। বিজ্ঞজনদের সমালোচনা তারুণ্যের এই বাধভাঙা স্রোতের মুখে বাঁধ দিতে পারেনি। অন্য রকম গান তখন জায়গা করে নিচ্ছিল প্রচলিত গানের পাশাপাশি।
অনেকেরই মনে পড়ে যাবে, ষাটের দশকে পাশ্চাত্যে প্রথা ভাঙা জীবনের বীজ রোপিত হয়েছিল। হিপ্পি, বিট আন্দোলন যেমন ছিল, তেমনি এলভিস প্রিসলি, বব ডিলান, রোলিং স্টোন, বিটলস-এর মতো গায়ক ও ব্যান্ডের মাধ্যমেও নতুন সুর আর ছন্দের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছিল বিশ্ব। তারই পথ ধরে আমাদের দেশে এল পপ-সংস্কৃতি। আজম খানেই আমরা দেখলাম সে সংস্কৃতির পরিপূর্ণ রূপ।
মুক্তিযুদ্ধের পর যাঁরা আজম খানকে দেখেছেন, শুনেছেন তাঁর গান, তাঁরা তখন তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন এক রাগী যুবককে। কিন্তু যাঁরা মিশেছেন তাঁর সঙ্গে, তাঁরা জানেন বিনয়, সততা আর সুরের প্রতি ভালোবাসার আরেক নাম আজম খান। অনেকেরই মনে পড়ে যাবে ‘আসি আসি বলে তুমি আর এলে না’, ‘ও চাঁদ সুন্দর রূপ তোমার’, ‘সারা রাত জেগে জেগে’, ‘হৃদয় সাগর মরুভূমি’ গানগুলো একসময় শাসন করেছে বাংলাদেশ। তাঁর একটি কনসার্টে উপস্থিত হওয়ার জন্য কত কষ্ট করেই না টাকা জমাত সে যুগের কিশোর-তরুণেরা। কখনো কখনো বর্ষীয়ান কেউ কেউও সে সুরসাগরে মেলাত প্রাণ।
২০১১ সালের ৫ জুন আজম খান চলে গেছেন। ততদিনে নতুন নতুন ব্যান্ড, নতুন নতুন শিল্পী এসে গেছে নাগরিক বিনোদনের খিদে মেটাতে। তাই বলে কি আজম খান হারিয়ে গেলেন একেবারে?
সে প্রশ্ন না হয় পড়ে থাকল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়টাকে কাছে থেকে দেখেছি, তারা জানি, আমাদের মনজুড়ে ছিলেন তিনি, ছিলেন সৃজন ছন্দে আনন্দে।