রাজশাহীতে দুলু আতংক: ত্রাসের জনপদ বানাতে মরিয়া এক গডফাদার
- আপডেট সময় : ০৫:৩৩:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১৮ ২৭ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহীতে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন ২ জন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী এবং জঙ্গিবাদের মদদদাতা বলে পরিচিত রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করেই নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রধান দু্ই দল। এবার রাজশাহী সিটির মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ আর নারীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি থেকে বেড়ে ১৩৮টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে গোটা রাসিক জুড়ে।
নাটোরের ত্রাস হিসেবে খ্যাত, বাংলা ভাইয়ের মদদদাতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার সোমবার থেকে রাজশাহীতে অবস্থানের পর থেকেই উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। সোমবার রাতে রাজশাহীর পর্যটন মোটেলে লন্ডনে থাকা বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বেশ সময় ধরে কথা বলেন দুলু। তারেকের কথামত সকালে দুলু এ কাণ্ড ঘটিয়েছে এমন তথ্য জানা যায় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে। নৌকার জোয়ার দেখে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের প্রার্থীর পথসভায় বোমা হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহাজোটের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। দুলু কি শুধুই একজন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক? রাজনীতির বাইরে দুলুর মুখোশের আড়ালের চেহারাটা কেমন?
সরেজমিনে রাজশাহী ও নাটোর ঘুরে এবং মানুষের সাথে কথা বলে দুলুর পরিচিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী সমর্থন—কোনো কিছুতেই গণতান্ত্রিক কোনো প্রক্রিয়া মেনে চলেন না রুহুল কুদ্দুস। সর্বত্র তিনি আত্মীয়করণ করছেন। তিনি নিজে জেলা বিএনপির সভাপতি, তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীন সহসভাপতি, বড় ভাই রুহুল আমিন তালুকদার পৌর বিএনপির সভাপতি। এ তো গেল শুধু স্বজনপ্রীতি, কিন্তু দুলুর অপরাজনীতি এর চেয়েও অনেক বিশাল।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানের মত দুর্ধর্ষ জঙ্গির উত্থান ঘটেছিল বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে। ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ রাজশাহীর বাগমারায় সর্বহারা নিধনের নামে দুলুর নেতৃত্বে শায়খ আব্দুর রহমান ৭ জনকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করেছিল।
উগ্রপন্থী দল জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী খামারু আটক হওয়ার পর তার মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, তার হস্তক্ষেপে খামারুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর- এমনটাই জানা যায় উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তা অনুযায়ী। তারবার্তার তথ্য অনুযায়ী, জেএমবি নেতা খামারুকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। কিন্তু তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পরামর্শে তারেক রহমান এ কাজ করেছেন বলে জানান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খায়রুজ্জামান লিটন আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন এলাকাবাসী। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল ঘুরে লিটনের পক্ষে জনসমর্থন দেখা যায়। এটা ভেবে বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ভোট বানচাল করার জন্য গতকাল থেকে রাজশাহীতে অবস্থান করে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন- বলে দাবি করছেন অনেকে।