টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভিপি সাঈদের নেতৃত্বে সরকারি পুকুর ভরাটের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৯:৩৫:১৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কলেজের সাবেক ভিপি আবু সাঈদ মিয়ার নেতৃত্বে খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর বাইপাস বাসস্টেশনের দক্ষিন পাশে বাওয়ার কুমারজানী মৌজায় ৩৮২ দাগে ৬.৫৬ একর এবং ৩৮৩ দাগে ৪.৬৫ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮২ দাগে ১.৫৬ শতাংশ জমি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক প্রশস্ত করণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। এছাড়া আরও প্রায় ১.৫ একর ব্যাক্তি মালিকাধীন জমি রয়েছে। আর ৩৮৩ দাগে ৪.৬৫ একর জমির মধ্যে প্রায় ২ একর জমি ব্যাক্তি মালিকাধীন। অবশিষ্ট জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। যা বর্তমানে ওই পুকুরে রয়েছে। আর ব্যাক্তিমালিকাধীন জমিতে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।
সম্প্রতি ওই জায়গার উপর নজর পড়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ মিয়ার। সরকারি ওই জায়গার পাশেই তার বাড়ি। তিনি প্রায় এক মাস আগে তাঁর কয়েকজন সহযোগিদের নিয়ে পুকুরটি ভরাট শুরু করেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আজগর হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ করেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে আবারও পুকুরটি ট্রাকযোগে মাটি এনে ভরাট করা হচ্ছে।
রোববার পুকুরের পাশে দাড়িয়ে দেখা যায় পুকুরে মাটি ফেলার দৃশ্য। বড় বড় ট্রাকে (ড্রাম ট্রাক) করে অন্যত্র থেকে মাটি এনে ফেলা হচ্ছে। সেখানে দাড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবু সাঈদ মিয়া। গড়ে প্রতিদিন ৮টি ট্রাকযোগে কমপক্ষে ৪৫-৫০ ট্রাক মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই পুকুরটিতে মাছ চাষ করছেন আশেপাশের লোকজন। যা দিয়ে মির্জাপুরে মাছের চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু পুকুর ভরাট করার ফলে মাছের চাহিদা ঘাটতি হবে বলে তারা অভিযোগ করেন।
এছাড়া বৃষ্টির সময় আবাসিক এলাকার পানি ওই পুকুরে গিয়ে পড়ে। এতে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায় আশেপাশের লোকজন। তাছাড়া বাজারে কোন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটালেও ওই পুকুর থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হতো।
মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. কফিল উদ্দিন জানান, ওই পুকুরটি মির্জাপুরের পানির সোর্স ছিল। পুকুরটি ভরাট হলে এলাকাবাসী পানির প্রকট সমস্যায় ভুগবেন। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে অগ্নিনির্বাপনের ক্ষেত্রে খুবই ভোগান্তি হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. সাখওয়াত হোসেন বলেন, ৩৮২ দাগের মোট ৬.৫৬ একর জমির মধ্যে ১.৫৬ একর জমি মহাসড়ক নির্মাণের সময় সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। আর কিছু জমি কয়েকজন লোক পত্তনমূলে ভোগ দখল করছেন। তবে আমার মতে পুরো জায়গাই সরকারি সম্পত্তি। আর ৩৮২ দাগের ৪.৬৫ একর জমির মধ্যে প্রায় ২ একর জমি ব্যাক্তি মালিকাধীন হিসেবে স্থানীয়রা দখলে আছেন। অবশিষ্ট জমি পুকুরের রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রায় এক মাস আগে পুকুর ভরাট করতে চেয়েছিলেন। সে সময় তাদের বাধা দেয়া হয়েছিল। আবার তারাই পুনরায় পুকুরের মাটি ফেলছে বলে খবর পেয়েছি।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আজগর হোসেন জানান, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। এ ঘটনায় জতিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে আবু সাঈদ মিয়া জানান, তিনিসহ স্থানীয় ২৬ জন মিলে ৮৮ শতাংশ জায়গাতে মাটি ফেলা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ অতুল মন্ডল বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।