সোনালী বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক :
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিধবা নাজমা ওরফে ধলাবানু (৪২) হত্যাকান্ডের সাড়ে ছয়মাস পর খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মুঠোফোনের সূত্র ধরে গত শনিবার রাতে উপজেলার মুচারিয়া পাথার গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেনকে (২২) গ্রেফতারের পর আলোচিত এ হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। রোববার টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আলমগীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিমা বংকী বেতুয়াপাড়ার বাসায় বিধবা নাজমা একাই থাকতেন। এ সুযোগে খুনিরা ৭ জন মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। চিৎকার করায় ওই বিধবার গলায় গামছা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ওই সাত যুবকের শেষ ধর্ষণকারী আলমগীর ধর্ষণ করতে গিয়ে দেখে নাজমা মারা গেছে। পরে তাকে গোসলের কক্ষে রেখে পালিয়ে যায়। খুনিরা তার মুঠোফোন ও গায়ের স্বর্ণালঙ্কারও লুট করে নিয়ে যায়। ওই মুঠোফোনের সূত্র ধরেই গত শনিবার আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
নাজমার স্বামী নছর আলী ১০ বছর আগে মারা যান, ছেলের মধ্যে বড় ছেলে নাজমুল হাসান বৈশাখী টিভির গাড়িচালক ও আজিজুল ঢাকায় দরজির কাজ করেন। নাজমুল গত সোমবার বলেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আমার শ্বশুরও জেল খেটেছেন। ফলে স্ত্রীর সঙ্গে ছয় মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ। এখন প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও প্রকৃত খুনি শনাক্ত হওয়ায় আবার নিশ্চয়ই আমার সংসারের ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হবে। আমি মায়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
যেভাবে খুনের রহস্য উদঘাটন হলো।
এসআই শামসুল বলেন, নাজমার মুঠোফোনটির আইএমইআই নম্বরটি সংগ্রহ করে রাখা হয়। দেড় মাস আগে ওই মুঠোফোনটি ব্যবহার শুরু করে ময়মনসিংহের ভালুকার বাটাজোর গ্রামের মানিক মিয়া। মানিককে থানায় এনে ফোনটি জব্দ করা হয়। মানিক পুলিশকে বলেন, তার ফোনসেটটি তাঁর স্ত্রী উপহার দিয়েছেন। স্ত্রীকে থানায় আনা হয়, স্ত্রী বলেন, তাঁর এক ভাগনে ঢাকা চাকরি করেন। তাঁর কাছ থেকে ৪০০ টাকায় ওই সেটটি কিনে স্বামীকে উপহার দেন। ভাগনেকে ঢাকার গাজীপুর থেকে আটক করে ওই ফোন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ভাগনে একপর্যায়ে। বলেন, ‘আমি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওই ফোনটি কুড়িয়ে পাই। ওই অটোরিকশার চালক সখীপুরের পাথার গ্রামের মোতালেব। তার সাথে আমার পরিচয় আছে। পরে বিকেলে ফোন করে জানান, তিনি হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোনটি পেয়েছিলেন কি না। পরে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। গত শনিবার আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ধর্ষণ ও খুনের কথা স্বীকার করেন। রবিবার জৈষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম সুমন কুমারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ অক্টোবর বিকেলে সখীপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়ির টয়লেট থেকে নাজমার অর্ধ্বগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় । ওইদিন রাতেই নাজমার ছোট ছেলে আজিজুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সখীপুর থানায় মামলা করেন।