পহেলা মে। মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবের দিন। দৈনন্দিন কাজের সময় আট ঘণ্টায় নামিয়ে আনার দাবিতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ দিয়েছিলেন ১১ শ্রমিক। তাদের আত্মত্যাগ স্মরণে ১৮৯০ সাল থেকে দিনটি অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে পালন করে আসছেন শ্রমিকরা। সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। মে দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সরকারি ছুটি।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বরাবরের মতো এবারো রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস পালন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোগী শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
মে দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে শিকাগো শহরের তিন লাখের বেশি শ্রমিক কাজ বন্ধ রাখেন। শিকাগোর হে মার্কেটে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে যোগ দেন লক্ষাধিক শ্রমিক। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ১১ শ্রমিক হত্যার পর হে মার্কেটের ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক ও জনতার বৃহৎ ঐক্য। তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১ মে তারিখটিকে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করতে শুরু করে।