শিরোনাম
নাগরপুরে জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা Headline Bullet       রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের নিয়ে মৌসুমী ফলের উৎসব Headline Bullet       বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন: প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা Headline Bullet       হত্যার ভয় দেখিয়ে শিশু বলাৎকার, সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার গ্রেফতার Headline Bullet       যায়যায়দিন সমাজের প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে Headline Bullet       ভূঞাপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল কেড়ে নিলো দুইজনের প্রাণ Headline Bullet       নাগরপুরে পথসভায় উপ-মন্ত্রী এনামুল হক শামীম Headline Bullet       মির্জাপুরে দুস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে হুইল চেয়ার ও নগদ অর্থ প্রদান Headline Bullet       আন্তঃজেলা ভলিবল প্রতিযোগিতায় আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন টাঙ্গাইল Headline Bullet       বাজেটে কৃষিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি—- কৃষিমন্ত্রী Headline Bullet      

হৃদরোগ কি? হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয়

সোনালী বাংলাদেশ নিউজ
সম্পাদনাঃ ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ - ০৯:২০:০৪ পিএম

হৃদরোগ বলতে সাধারনভাবে হৃৎপিন্ড, রক্তবাহী ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক সম্পর্কিত রোগ বোঝায়। হৃদরোগের অনেক কারণের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রধান। সাথে সাথে বয়সের সাথে হৃৎপিন্ড ও ধমনীর গঠনগত পরিবর্তনও হৃদরোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী। হৃদরোগ সাধারনত বয়স্কদেরই হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হন। পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে অনেকাংশে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব হতে পারে।

হৃদ রোগ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন- জন্মগত হৃদ-রোগ, করোনারি হৃদ রোগ, হার্ট ফেইলর, কার্ডিও-মায়োপ্যাথি, উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদ রোগ, কোর পালমোনাল (হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যায় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়), সেরেব্রোভাস্কুলার রোগ (মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তবাহিকার অসুখ, যেমন- স্ট্রোক), প্রান্তিক ধমনীর রোগ, রিউম্যাটিক হৃদ রোগ (বাতজ্বরের কারণে হৃদপেশি ও ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া), কার্ডিয়াক ডিসরিদ্মিয়াস ইত্যাদি।

হৃদরোগের কারন
হৃদরোগের জন্য অনেক কারন দায়ী। যেমন- বয়স, লিঙ্গ, ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, পারিবারিক ইতিহাস, স্থূলতা, স্বল্প শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে অসচেতনতা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন, নিয়মিত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রম, খাবার দাবারে একটু সচেতন হলে এবং ঊচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ লিপিড, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস করা যেতে পারে।

কোন বয়সে হতে পারে?
হৃদরোগ সব বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারনত বয়স্ক ব্যক্তিরাই এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারনভাবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৮২ শতাংশই হৃদরোগে মারা যায়। আবার ৫৫ বছর বয়সের পরে স্ট্রোক করার সম্ভাবনাও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আবার বয়সের সাথে সাথে ধমনীর স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়, ফলে করোনারি ধমনী রোগ হয়।

কাদের হতে পারে?
প্রজননে সক্ষম নারীর তুলনায় পুরুষদের হৃদরোগ হবার ঝুঁকি বেশি। প্রজননের সময়ের পরে, নারী ও পুরুষের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সমান। যদি কোন নারীর ডায়াবেটিস থাকে, তার হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষের চেয়ে বেশি। মধ্যবয়সী মানুষের ক্ষেত্রে, করোনারি হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা নারীদের তুলনায় পুরুষদের প্রায় ৫ গুণ বেশি। হৃদরোগে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ মূলত হরমোনগত পার্থক্য।

হৃদরোগের লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ

  • বুক, পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যাথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভুত হতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট
  • পাকস্থলির উপররের দিকে অসহনীয় ব্যাথা অনুভূত হবে।
  • মাথা হালকা লাগতে পারে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়
হৃদরোগ নানান রকমের হতে পারে, যেমন- জন্মগত হৃদরোগ, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ জনিত হৃদরোগ, হৃদপিণ্ডে স্বল্প রক্ত চলাচলজনিত হৃদরোগ, হৃদপিণ্ডে মাংসের দুর্বলতাজনিত হৃদরোগ ইত্যাদি। হৃদরোগ প্রতিরোধে সতর্ক হলে অনেক ভাল ফল পাওয়া যায়। নিম্নে জন্মগত হৃদরোগ এবং অন্যান্য হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয় বিষয় সম্মন্ধে বর্ণনা করা হলঃ

অন্যান্য হৃদরোগ প্রতিরোধে করনীয়
কম বয়সী ছেলে বা মেয়ের গলাব্যথাসহ জ্বর হলে, তাকে এক সপ্তাহের জন্য পেনিসিলিন ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ হওয়ার আশংকা অনেকটা হ্রাস পাবে। আবার স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচলজনিত কারণে হার্ট অ্যাটাকের মত মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা প্রতিরোধে খাবার এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন-

  • প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় হাঁটা বা ব্যায়াম অথবা শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এটা হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।
  • প্রচুর পরিমানে ফলমুুুল, শাকসবজি, তরকারি, টক জাতীয় ফল খেতে হবে। অপরদিকে লবণ ও চিনি কম খেতে হবে।
  • বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে।
  • মদ্যপান, জর্দা, তামাক, ধূমপান ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ধূূূমপান ছাড়ার পরবর্তী ১০ বছর সময় পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে যায়।
  • ফাস্টফুড, টিনজাত ও শুকনো খাবার খাওয়া কমাতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিমানে চা, কফি এবং কোমলপানীয় বর্জন করতে হবে।
  • ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোন ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে।
  • মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং কিছু কিছু ওষুধ হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • শরীরে চর্বি জমতে দেয়া যাবে না। এটা হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারনভাবে পুরুষের কোমরের মাপ ৩৭ ইঞ্চির কম ও মহিলাদের ৩২ ইঞ্চির কম হওয়া উচিত। বিএমআই ২৫ এর চেয়ে যত বেশি হবে, সেটা হৃদরোগের জন্য তততাই ঝুঁকিপূর্ণ। ওজন যত কিলোগ্রাম হবে, তাকে উচ্চতা যত মিটার তার বর্গ দিয়ে ভাগ করে বিএমআই নির্ণয় করতে হয়।
    • ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে, সুষম খাদ্য গ্রহন করতে হবে। প্রাণিজ চর্বি খাওয়া যাবে না, তবে উদ্ভিদ তেল খেতে হবে যেমন- সয়াবিন, সূর্যমুখী, সরিষার তেল ইত্যাদি। সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে। বাদাম হৃদরোগের জন্য উপকারী। বাদামের ভেষজ প্রোটিন, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্লাভোনয়েডস, সেলিনিয়াম ও ভিটামিন-ই হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
    • দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার চেষ্টা করতে হবে এবং ধর্মকর্মে মনোযোগী হতে হবে।
    • মানসিক চাপ অর্থাৎ অনিদ্রা, টেনশন, ভয়, ক্রোধ, হতাশা, রাগ, প্রতিশোধ প্রবণতা, হিংসা ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।
      উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে এক দিন রক্তচাপ পরীক্ষা এবং মাসে একবার করে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে।
    • রক্তের লিপিড প্রোফাইলে সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
    • বুকে ব্যথা থাকলে ইকোকার্ডিওগ্রাম ডপলার এবং হৃদরোগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে এনজিওগ্রাম করে নিশ্চিত হতে হবে হৃদপিণ্ডে ব্লক আছে কিনা।

    সবশেষে

  • হৃদ রোগ মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ বিশেষ করে ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত হৃদরোগে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। হৃদরোগের লক্ষণ জানলে এবং সচেতন থাকলে সহজেই হৃদরোগজনিত মৃত্যু থেকে অনেকটা নিরাপদে থাকা যায়। নিয়মিত হাঁটা বা কিছু শারীরিক পরিশ্রম, রাগ বা ক্রোধ নিয়ন্ত্রন, সকল ধরনের মাদক বর্জন এবং খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন হলে সহজেই হৃদরোগ থেকে নিরাপদে থাকা যায়।তারপরেও এ রোগের লক্ষণ জানা থাকলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। যেমন- পুরুষের ক্ষেত্রে হৃদরোগের সচরাচর লক্ষণ হচ্ছে বুকে ব্যাথা অনুভব করা। এরকম লক্ষণ কেউ টের পেলে তাকে তাৎক্ষাণিকভাবে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে ইসিজি করে হার্টের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। তাই যদি এই রোগের লক্ষণ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সর্বশেষ
জনপ্রিয় খবর
%d bloggers like this: